পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এই পরীক্ষাগুলো ছাত্রছাত্রীদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। মাধ্যমিক পাশ করার পর ছাত্ররা নিজেদের পছন্দের স্ট্রিম বেছে নেয়, আর উচ্চ মাধ্যমিকের পর শুরু হয় ক্যারিয়ার গঠনের পথচলা। কিন্তু উচ্চশিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা অনেক দরিদ্র পরিবারের পক্ষে কঠিন। তাই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন স্কলারশিপ দিয়ে মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করে। এর মধ্যে সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপ একটি উল্লেখযোগ্য নাম। ২০২৫ সালে এই স্কলারশিপের আবেদন প্রক্রিয়া, যোগ্যতা ও সুবিধাগুলো নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
স্কলারশিপের বিবরণ
স্কলারশিপের নাম: সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপ
প্রদানকারী: সীতারাম জিন্দাল ফাউন্ডেশন
উদ্দেশ্য: দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
যে কোর্সগুলির জন্য এটি প্রযোজ্য:
- মাধ্যমিক (ক্লাস ১০)
- উচ্চ মাধ্যমিক (ক্লাস ১২)
- আইটিআই (সরকারি ও বেসরকারি)
- স্নাতক (বিএ, বি.কম, বি.এসসি)
- স্নাতকোত্তর (এমএ, এম.কম, এম.এসসি)
- ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য প্রফেশনাল ইত্যাদি কোর্স ।
আবেদনের যোগ্যতা
১. মাধ্যমিক (ক্লাস ১০) পাস ছাত্রছাত্রীদের জন্য
- মাধ্যমিকে ছাত্রদের ন্যূনতম ৭৫% নম্বর থাকতে হবে।
- মাধ্যমিকে ছাত্রীদের ন্যূনতম ৭০% নম্বর থাকতে হবে।
২. উচ্চ মাধ্যমিক (ক্লাস ১২) পাস ছাত্রছাত্রীদের জন্য
- উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্রদের ন্যূনতম ৭৫% নম্বর থাকতে হবে।
- উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্রীদের ন্যূনতম ৭০% নম্বর থাকতে হবে।
৩. আইটিআই কোর্সের জন্য
- সরকারি আইটিআই: পাস মার্ক থাকলেই এখানে আবেদন করা যাবে।
- বেসরকারি আইটিআই:
- ছাত্রদের ন্যূনতম ৫৫% নম্বর থাকতে হবে।
- ছাত্রীদের ন্যূনতম ৪৫% নম্বর থাকতে হবে।
৪. সাধারণ স্নাতক (বিএ, বি.কম, বি.এসসি) কোর্সের জন্য
- উচ্চ মাধ্যমিকে ন্যূনতম ৬৫% (ছাত্র) ও ৬০% (ছাত্রী) নম্বর থাকতে হবে।
৫. স্নাতকোত্তর (এমএ, এম.কম, এম.এসসি) কোর্সের জন্য
- স্নাতক পর্যায়ে ন্যূনতম ৬০% (ছাত্র) ও ৫৫% (ছাত্রী) নম্বর থাকতে হবে।
৬. বিশেষ শারীরিক সক্ষমতা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের জন্য
- কোনো ন্যূনতম মার্কের প্রয়োজন নেই।
৭. ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য উচ্চ ব্যয়সাপেক্ষ কোর্সের জন্য
- ন্যূনতম ৬৫% নম্বর থাকতে হবে।
স্কলারশিপের পরিমাণ
এই স্কলারশিপে মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। কোর্স অনুযায়ী বৃত্তির পরিমাণ নিচে দেওয়া হলো:
কোর্স | মাসিক বৃত্তির পরিমাণ (₹) |
---|---|
উচ্চ মাধ্যমিক | ৫০০ – ৭০০ |
সাধারণ স্নাতক (বিএ/বি.কম/বি.এসসি) | ১১০০ – ১৪০০ |
স্নাতকোত্তর (এমএ/এম.কম/এম.এসসি) | ১৫০০ – ১৮০০ |
ইঞ্জিনিয়ারিং ও উচ্চ ব্যয়সাপেক্ষ কোর্স | ৩০০০ – ৩২০০ |
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
স্কলারশিপের জন্য নিচের যেসব ডকুমেন্টস প্রয়োজন:
- আবেদনকারীর পরিচয় পত্র (আধার কার্ড/ভোটার আইডি/স্কুল আইডি কার্ড) যেকোনো একটি।
- পরিবারের আয়ের প্রমাণপত্র (বিপিএল কার্ড/ইনকাম সার্টিফিকেট) যেকোনো একটি।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার মার্কশিট (সব ক্লাসের মার্কশিট ও সার্টিফিকেট)
- বর্তমান কোর্সের অ্যাডমিশন রশিদ।
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস (IFSC কোড সহ)।
- শারীরিক প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট (যদি থাকে)।
- জাতি/বিশেষ ক্যাটাগরি সার্টিফিকেট (যদি প্রয়োগ হয়)।
আবেদন পদ্ধতি
সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের জন্য অফলাইন পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
ধাপ ১: আবেদন ফর্ম ডাউনলোড
- সীতারাম জিন্দাল ফাউন্ডেশন ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম ডাউনলোড করুন।
- অথবা, নিকটস্থ শিক্ষা দপ্তর/কলেজ থেকে সংগ্রহ করুন।
ধাপ ২: ফর্ম পূরণ
- A4 সাইজের কাগজে ফর্ম প্রিন্ট করে নীল / কালো কালির পেন দিয়ে সঠিক তথ্য পুরন করো।
- কোনো ভুল তথ্য দিলে আবেদন কিন্তু বাতিল হতে পারে।
ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংযুক্তি
- সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ফর্মের সঙ্গে অ্যাটাচ করুন।
- প্রতিটি ডকুমেন্টে নিজের স্বাক্ষর করুন।
ধাপ ৪: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভেরিফিকেশন
- স্কুল/ কলেজের প্রধান শিক্ষক বা প্রিন্সিপাল দ্বারা ফর্মটি ভেরিফাই করিয়ে নিন।
ধাপ ৫: আবেদন জমা দেওয়া
সমস্ত ডকুমেন্টস সহ নিচের ঠিকানায় রেজিস্টার্ড পোস্ট / স্পিড পোস্ট করে এই ঠিকানায় পাঠান:
আবেদন জমা দেওয়ার ঠিকানা:
The Trustee,
Sitaram Jindal Foundation,
Jindal Nagar, Tumkur Road,
Bengaluru – 560073
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- আবেদনের শেষ তারিখ: সাধারণত প্রতি বছর ৩১ জুলাই পর্যন্ত এই আবেদন করা যায়।
- স্কলারশিপের টাকা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
- একাধিক কোর্সে একই সময়ে স্কলারশিপ দেওয়া হয় না।
- ভুয়া ডকুমেন্টস জমা দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন (FAQ)
১. এই স্কলারশিপ কারা পাবেন?
দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা, যাদের পারিবারিক আয় কম এবং ন্যূনতম মার্কস আছে তারাই শুধুমাত্র এখানে আবেদন করতে পারবে।
২. আবেদন করার পর স্কলারশিপ কখন পাবো?
আবেদন যাচাই শেষে সাধারণত ৩-৬ মাসের মধ্যে টাকা দেওয়া শুরু হয়।
৩. ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্ররা বেশি টাকা পাবেন কেন?
কারণ ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের ফি ও খরচ অনেক বেশি। তাই এই স্কলারশিপে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়।
৪. একবার স্কলারশিপ পেলে পরের বছর আবার আবেদন করতে হবে?
হ্যাঁ, প্রতি বছর নতুন করে আবেদন করতে হবে এবং একাডেমিক পারফরম্যান্স ভালো রাখতে হবে।
সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপ দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। উচ্চশিক্ষার পথে আর্থিক বাধা দূর করে এই স্কলারশিপ অনেককে স্বপ্নপূরণে সাহায্য করছে। তাই যারা যোগ্য, তারা দেরি না করে আবেদন করুন এবং নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করুন।
আরও তথ্যের জন্য:
🔹 ওয়েবসাইট: www.sitaramjindalfoundation.org
🔹 হেল্পলাইন: 1800-123-4567 (টোল-ফ্রি)