ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, এবং এখানে নাগরিকদের ভোটাধিকার একটি মৌলিক অধিকার। এই অধিকার প্রয়োগের জন্য ভোটার কার্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রমাণপত্র। সাধারণত ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী ভারতীয় নাগরিকরা ভোটার কার্ড তৈরি করে নিজেদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন। তবে সম্প্রতি ভোটার কার্ড সংক্রান্ত কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার নতুন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করার সিদ্ধান্ত
ভারত সরকার ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করার প্রক্রিয়া চালু করতে চলেছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকায় জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হবে। কিন্তু কবে থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে? কত দিনের মধ্যে ভোটারদের এই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে? ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড লিঙ্ক করলে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে? চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড লিঙ্ক করার সুবিধা
১. ভোট দিতে সহজ প্রক্রিয়া
বর্তমানে ভোট দিতে গেলে ভোটার কার্ডের পাশাপাশি আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অন্য কোনো পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড লিঙ্ক করা থাকলে শুধুমাত্র ভোটার কার্ডই যথেষ্ট হবে।
২. ভোটার তালিকায় জালিয়াতি কমবে
ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড যুক্ত হলে এক ব্যক্তির একাধিক ভোটার আইডি তৈরি করা কঠিন হবে। ফলে ভোট জালিয়াতির ঘটনা কমবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে।
৩. অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোধ
ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে অনেক সময় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা জাল ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড তৈরি করে। ভোটার ও আধার কার্ড লিঙ্ক করার ফলে এই সমস্যা অনেকটাই কমবে।
৪. নির্বাচন কমিশনের সরাসরি তথ্য পাওয়া
ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড লিঙ্ক করা থাকলে নির্বাচন কমিশন সরাসরি ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দিতে পারবেন। ফলে গুজব ও বিভ্রান্তি কমবে।
ভোটার ও আধার কার্ড লিঙ্ক না করালে কী সমস্যা হবে?
কেন্দ্রীয় সরকার শীঘ্রই ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড লিঙ্ক করার বিষয়ে কঠোর নির্দেশিকা জারি করতে পারে। যদি কোনো ভোটার এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেন, তাহলে তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে। এমনকি, ভোটার কার্ডটি অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে বাতিলও হয়ে যেতে পারে।
ভোটার ও আধার কার্ড লিঙ্ক করার প্রক্রিয়া
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বাড়ি বসেই অনলাইনে ভোটার ও আধার কার্ড লিঙ্ক করা যায়। নিচে ধাপে ধাপে পদ্ধতি দেওয়া হলো:
ধাপ ১: ভোটার সেবা পোর্টালে যান
সর্বপ্রথম ভোটার সার্বিস পোর্টাল-এ যান।
ধাপ ২: লগইন বা রেজিস্ট্রেশন করুন
- যদি আগে থেকে অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে মোবাইল নম্বর, পাসওয়ার্ড ও ক্যাপচা কোড দিয়ে লগইন করুন।
- নতুন ব্যবহারকারীদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
ধাপ ৩: ফর্ম পূরণ করুন
- নতুন ভোটারদের ফর্ম ৬ পূরণ করতে হবে।
- পুরনো ভোটারদের ফর্ম ৬ বি পূরণ করতে হবে।
ধাপ ৪: তথ্য যাচাই ও সাবমিট করুন
- ফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য (নাম, ভোটার আইডি, আধার নম্বর ইত্যাদি) পূরণ করুন।
- সাবমিট করার পর মোবাইলে OTP আসবে, সেটি ভেরিফাই করুন।
- সব তথ্য ঠিক থাকলে ফাইনাল সাবমিট করুন।
ধাপ ৫: রেফারেন্স নম্বর সংরক্ষণ করুন
সাবমিট করার পর একটি রেফারেন্স নম্বর দেওয়া হবে। এটি সংরক্ষণ করুন, যাতে পরে আপনি আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করতে পারেন।
কখন থেকে শুরু হচ্ছে এই প্রক্রিয়া?
সরকার এখনো চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করেনি, তবে শীঘ্রই এই প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ভোটার ও আধার কার্ড লিঙ্ক করে ফেলা উচিত।
সতর্কতা
- শুধুমাত্র সরকারি ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।
- কাউকে নিজের আধার বা ভোটার কার্ডের ডিটেইলস শেয়ার করবেন না।
- কোনো সমস্যা হলে হেল্পলাইন 1950 নম্বরে যোগাযোগ করুন।
ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড লিঙ্ক করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা ভোটার তালিকাকে আরও স্বচ্ছ ও নির্ভুল করবে। তাই দেরি না করে আজই এই কাজটি সম্পন্ন করুন এবং গণতন্ত্রের এই মহান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন।